ই-পাসপোর্ট আবেদনের স্টেপ বাই স্টেপ গাইড (২০২৫)
আজেকের এই আর্টি কেলে আপনাদের ই-পাসপোর্ট আবেদনের স্টেপ বাই স্টেপ গাইড (২০২৫) সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। পুরো আর্টিকেল পড়লে আপনি ই-পাসপোর্ট কী? ই-পাসপোর্ট করার জন্য যা যা দরকার (ডকুমেন্টস লিস্ট), ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ও ফি কাঠামো (২০২৫ আপডেট), অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন করার ধাপসমূহ, কত দিনে ই-পাসপোর্ট পাওয়া যায়? ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি আরো জানতে পারবেন বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার পুরো প্রক্রিয়া সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা, মোবাইল অ্যাপ থেকে আবেদন (আসছে শীঘ্রই), ই-পাসপোর্ট রিসিভ করার নিয়ম ইত্যাদি।
🔎 ভূমিকা,
বর্তমান যুগে ডিজিটাল পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট (Electronic Passport) একটি অত্যাধুনিক ব্যবস্থা, যা নাগরিকদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং পরিচয় যাচাইয়ে অধিক নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট চালু করেছে বিশ্বের প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে, যা Machine Readable Passport (MRP)-এর চেয়ে অনেক বেশি উন্নত।
এই আর্টিকেলে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে আপনি ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে পারেন, কী কাগজপত্র লাগবে, ফি কত, এবং অনলাইন থেকে আবেদন শুরু করে হাতে পাসপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ই-পাসপোর্ট আবেদনের স্টেপ বাই স্টেপ গাইড (২০২৫)।
✅
ই-পাসপোর্ট কী?
ই-পাসপোর্ট হলো একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট যাতে একটি ইলেকট্রনিক চিপ থাকে। এই চিপে আবেদনকারীর সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন—ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের রেটিনা স্ক্যান, ছবি এবং স্বাক্ষর সংরক্ষিত থাকে। এটি অনেক বেশি নিরাপদ এবং জালিয়াতি রোধে কার্যকর।
📃 ই-পাসপোর্ট করার জন্য যা যা দরকার (ডকুমেন্টস লিস্ট)
আপনার যদি আগে থেকে MRP পাসপোর্ট না থাকে, তাহলে নিচের কাগজপত্র লাগবে:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- জন্মনিবন্ধন সনদ (যদি বয়স ১৮’র নিচে হয়)
- স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার তথ্য
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (ঐচ্ছিক)
- পিতা-মাতা/অভিভাবকের পরিচয়পত্রের কপি (১৮ বছরের কম হলে)
- পুরনো পাসপোর্ট (যদি থাকে)
- ছবি ও স্বাক্ষর (অনলাইন আবেদনেই দিতে হবে)
📌 ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ও ফি কাঠামো (২০২৫ আপডেট)
মেয়াদ ডেলিভারি টাইপ ফি (ঢাকায়) ফি (ঢাকার বাইরে)
- ৫ বছর সাধারণ (২১ কার্যদিবস) ৳৪,০২৫ ৳৪,০২৫
- জরুরি (৭-১০ দিন) ৳৬,৩২৫ ৳৬,৯০০
- অতি-জরুরি (২-৩ দিন) ৳৮,৬২৫ ৳৯,২০০
- ১০ বছর সাধারণ ৳৫,৭৫০ ৳৫,৭৫০
- জরুরি ৳৮,০৫০ ৳৮,৬২৫
- অতি-জরুরি ৳১০,৩৫০ ৳১০,৯২৫
💡 দ্রষ্টব্য: ফি ব্যাংকে সরাসরি জমা দিতে হবে অথবা অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে।
🖥️ অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন করার ধাপসমূহ
🔹 Step 1: www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে যান
প্রথমে সরকারি ই-পাসপোর্ট পোর্টাল ভিজিট করুন।
"Apply for E-passport" বাটনে ক্লিক করুন।
🔹 Step 2: আবেদনকারীর তথ্য প্রদান
একটি নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।
আপনার নাম, জন্ম তারিখ, NID নম্বর, মোবাইল, ইমেইল ইত্যাদি দিন।
একটি ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড সেট করুন।
🔹 Step 3: আবেদন ফর্ম পূরণ
আবেদন ফর্মটি ভালোভাবে পূরণ করুন। তথ্য ভুল থাকলে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে।
আপনার ঠিকানা, পেশা, পরিচিতি তথ্য দিন।
পুরোনো পাসপোর্ট থাকলে তা উল্লেখ করুন।
🔹 Step 4: ই-পাসপোর্ট অফিস বাছাই
আপনি যে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করবেন সেটি নির্বাচন করুন (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ইত্যাদি)।
একটি নির্দিষ্ট সময় ও তারিখে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন।
🔹 Step 5: ফি পরিশোধ
অনলাইন বা ব্যাংক থেকে নির্ধারিত ফি জমা দিন।
রিসিট সংরক্ষণ করুন।
🔹 Step 6: নির্ধারিত তারিখে অফিসে উপস্থিত হন
আবেদন ফর্ম ও রিসিট প্রিন্ট করে নিয়ে যান।
বায়োমেট্রিক তথ্য (ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, সিগনেচার) জমা দিন।
ইন্টারভিউ দিতে হতে পারে (বিশেষ ক্ষেত্রে)।
🔹 Step 7: আবেদন ট্র্যাক করুন
ওয়েবসাইটে লগইন করে Application ID দিয়ে আপনার আবেদন ট্র্যাক করতে পারবেন।
“Passport Ready for Delivery” দেখালে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
📦 কত দিনে ই-পাসপোর্ট পাওয়া যায়?
- টাইপ ডেলিভারি সময়
- সাধারণ ২১ কার্যদিবস
- জরুরি ৭-১০ কার্যদিবস
- অতি-জরুরি ২-৩ কার্যদিবস
🕓 পরামর্শ: ঢাকা শহরে অনেক সময় কম লাগলেও জেলা শহরে একটু বেশি সময় লাগতে পারে।
🧾 ই-পাসপোর্ট রিসিভ করার নিয়ম
- পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে আপনাকে এসএমএস বা ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হবে। এরপর আপনাকে:
- আবেদন রিসিপ্ট
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা পুরোনো পাসপোর্ট
- সহ অফিসে উপস্থিত হয়ে পাসপোর্ট গ্রহণ করতে হবে।
⚠️ সাধারণ ভুল ও সতর্কতা
- ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
- জাল ডকুমেন্ট দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
- ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিল না হলে দেরি হতে পারে।
- ছবি নির্দিষ্ট মাপ ও ব্যাকগ্রাউন্ড অনুযায়ী দিতে হয়।
💡 অতিরিক্ত টিপস
- সকাল ৯টার আগেই অফিসে যান। ভিড় কম পাবেন।
- অনলাইনে ফি পরিশোধ করলে কনফার্মেশন কপি সঙ্গে রাখুন।
- পুরনো পাসপোর্ট থাকলে অবশ্যই জমা দিতে হবে।
- ১৮ বছরের নিচে হলে বাবা-মায়ের সম্মতিপত্র ও NID কপি লাগবে।
📱 মোবাইল অ্যাপ থেকে আবেদন (আসছে শীঘ্রই)
বাংলাদেশ সরকার একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করার পরিকল্পনা করছে যাতে সহজে ই-পাসপোর্ট আবেদন করা যাবে। এর মাধ্যমে ফর্ম পূরণ, ফি পরিশোধ ও ট্র্যাকিং আরও সহজ হবে।
🔚 উপসংহার
বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আন্তর্জাতিক মানের ই-পাসপোর্ট পাওয়া এখন খুবই সহজ ও দ্রুত। আপনি যদি উপরের ধাপগুলো ভালোভাবে অনুসরণ করেন, তাহলে ঝামেলা ছাড়াই নিজের ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করে নিতে পারবেন। আশা করি, এই স্টেপ বাই স্টেপ গাইড আপনার জন্য উপকারে আসবে।
📌 জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর (FAQs)
প্রশ্ন: ই-পাসপোর্টের জন্য কি হাতে ফরম পূরণ করতে হয়?
উত্তর: না, আবেদন শুধুমাত্র অনলাইনে করতে হয়।
প্রশ্ন: পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কি ই-পাসপোর্ট করা যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, কিন্তু হারানোর জিডি কপি লাগবে।
প্রশ্ন: আমার আগের MRP পাসপোর্ট আছে। এখন কী করব?
উত্তর: আপনি MRP থেকে ই-পাসপোর্টে পরিবর্তন করতে পারবেন সহজেই।
প্রশ্ন: পাসপোর্টে ভুল তথ্য থাকলে কিভাবে সংশোধন করব?
উত্তর: সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।
🔗 প্রয়োজনীয় লিংক
👉 ই-পাসপোর্ট আবেদন ওয়েবসাইট
👉 বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর
👉 NID অনলাইন সেবা
✍️ আপনার অভিজ্ঞতা কমেন্টে জানান!
আপনি যদি ইতোমধ্যেই ই-পাসপোর্ট করে থাকেন, তাহলে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। এতে অন্যরাও উপকৃত হবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url